রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় | রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় | রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল


রাগ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারো কম, কারো বেশি। এটা কোনো রোগ নয়। এটা মানুষের স্বাভাবিক একটা আবেগ। তবে এই আবেগটা মাত্রাতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রকাশ পেলেই যত সমস্যা। সংসার নষ্ট,সম্পর্ক নষ্ট থেকে শুরু করে খুন-খারাবি, মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়িয়ে যেতে পারে। সেইজন্য সবাইকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা জানতে হবে।

 অনেকেই আছেন যারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলগুলো জানেন না বিধায় সহজে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাদের জন্যই মূলত আজকের এই পোস্ট। এই পোস্টে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় অর্থাৎ রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ও চমৎকার কিছু টিপস দেওয়া হয়েছে। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা লাভ করতে পারবেন। 

রাগ কেন উঠে:

মানুষের মস্তিষ্কে লিম্বিক হাইপোথ্যালামাস পিট্যুইটারি অ্যাক্সিস বৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হয় ক্রোধ বা রাগ। অন্যদিকে অ্যাড্রিনালিন ও এরঅ্যাড্রিনালিন এই দুটি হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে মানুষের রাগও বেড়ে যায়। 

রাগ কি শরীরের জন্য ভালো?

রেগে গেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, নাড়ীর স্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে। রক্তচাপ, হৃদকম্পন বেড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও সেরিব্রাল অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত রাগে অনেকেই স্ট্রোকও করে ফেলেন। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা কৌশল :

কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লে আপনি যেকোনো ধরনের রাগকে প্রতিহত করতে পারবেন। এখানে উল্লেখিত রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলো সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -১ : নিশ্চুপ থাকা :

একা একা কেউ খুব বেশি রাগ করতে পারে না। আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন রাগের সময় মানুষ তড়িৎ গতিতে ঘর থেকে বের হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে গালাগালি করছে। এরকম পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ থাকবেন। তার সঙ্গে কোনো প্রকার তর্কে জড়াবেন না। একটা কথা মাথায় রাখবেন আপনি চুপ থাকলে তার রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না , ধীরে ধীরে কমে যাবে। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -২ : ভবিষ্যত পরিণাম উপলব্ধি:

অনেক সময় রাগারাগির কারণে সুন্দর সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই রাগের সময় মাথা ঠান্ডা করে গভীরভাবে উপলব্ধি করুন সামান্য সময়ের রাগের জন্য সারাজীবনের সম্পর্ক নষ্ট করা কি ঠিক? রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য এতটুকু ভাবনাই যথেষ্ট। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -৩ : গণনা করা :

রেগে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০ থেকে ০ পর্যন্ত উল্টা দিকে গণনা শুরু করে দিন। এটি আপনার Heartbeat কমিয়ে দিয়ে রাগ কন্ট্রোল করতে সহায়তা করবে। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -৪ : বুকভরে নিঃশ্বাস নেওয়া:

কেউ রেগে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। এটা রাগের একটা লক্ষণ। আপনি যখনই বুঝবেন খুব বেশি রেগে যাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে লম্বা করে শ্বাস গ্রহণ করে সেটি মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন , দেখবেন আপনার ভিতরে জমে থাকা রাগ সহজেই হালকা হয়ে গেছে। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -৫ : হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম:

আপনি যখনই বুঝতে পারছেন রাগ আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন , অথবা হালকা একটু ব্যায়াম করুন। হাঁটাহাঁটি কিংবা ব্যায়াম আপনার Stress কমিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। আপনি চাইলে সাঁতার কেটেও রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ব্যায়াম কিংবা সাঁতারে মস্তিষ্কে সেরেটেনিন ও এন্ডরফিল নামক দুইটি হরমোন নিঃসরণ হয় যা মনের মধ্যে প্রশান্তির অনুভূতি এনে দেয়। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -৬ : বলে ফেলার আগে ভাবা:

রাগ উঠে গেলে কারো হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা। তাই যা মুখ দিয়ে আসে বলে ফেলে। কোনো কিছু মুখ দিয়ে বলে ফেললে সেটা আর ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই রাগ উঠলে কথা বলা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। কথা যদি বলতেই হয় ভেবে চিন্তে বলুন যাতে করে পরে রাগ থেমে গেলে অনুতপ্ত না হতে হয়। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -৭ : সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা:

কোনো কিছুতে হুট করে রাগান্বিত না হয়ে রাগের কারণ উদঘাটন করে এটার সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। বাচ্চারা ঘরে গন্ডগোল করে অতিষ্ঠ করে তুলছে? তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন। কারো ব্যবহারে কষ্ট পাচ্ছেন ? তার সাথে এ বিষয়ে কথা বলুন। মনে রাখবেন, রাগ কখনো কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। বরং সবকিছুকে নষ্ট ও ধ্বংস করে দেয়। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -৮ : গান শোনা:

রাগ কমানোর জন্য গান শুনতে পারেন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে Relax করে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে রাখবে। তাছাড়া গান শুনলে মানুষের মন ভালো থাকে। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -৯ : ক্ষমা করতে শেখা:

যার উপর রেগে আছেন তাকে ক্ষমা করে দিন , দেখবেন মনের মধ্যে একধরনের প্রশান্তি অনুভব করছেন। আর যদি ভিতরে রাগ পুষে রাখেন এটি আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করবে। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -১০ : পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো:

রাতে ভালো ঘুম না হলে দিনের বেলায় মেজাজ সারাক্ষণ খিটখিটে থাকে। তখন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অযথাই রাগ উঠে পড়ে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দিনে ৭/৮ ঘুমালে মেজাজ ফুরফুরে থাকে, সহজে রাগ উঠেনা। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -১১ : মেডিটেশন :

Meditation মনকে কেন্দ্রীভূত করে মনকে স্থির রাখে। প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা একটু মেডিটেশন করুন। এতে করে আপনি যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -১২ : চিন্তা করা:

রেগে গেলে আপনি হয়তো সামনে যা পান ছুড়তে থাকেন। হোক মোবাইল কিংবা কাঁচের গ্লাস। ছুঁড়ে মারার আগে একবারও কি ভেবে দেখেছেন মোবাইলটা ভাঙ্গাতে ক্ষতিটা কার বেশি হল ? আপনারাই। তাই রাগ উঠার সাথে সাথে এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন।   

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -১৩ : নিজেকে শিথিল করা:

হঠাৎ রাগ উঠে পড়লে নিজেকে যতটা সম্ভব শিথিল করে ফেলুন। গঠনমূলক ছোট ছোট কিছু বাক্য যেমন ' it's ok, no problem, ইত্যাদি বারবার উচ্চারণ করে বেরিয়ে যান। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -১৪ : স্থান ত্যাগ করা:

যখন ই বুঝতে পারছেন রাগটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে সাথে সাথে ঐ স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। এতে আপনি নিজেকে পরাজিত ভাববেন না। বরং রাগ দমন করতে পেরেছেন এটা ভেবে নিজেকে বিজয়ী মনে করুন। মনে মনে নিজের প্রশংসা করুন। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল -১৫ : সব কিছু স্বাভাবিকভাবে নেওয়া:

ভূমিকম্প কিংবা নদীর ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি, ফসলাদি নষ্ট হয়ে গেলেও আমাদের কোনো প্রকার রাগ উঠে না। কিন্তু কেউ একজন অতি সামান্য একটা ক্ষতি করলেই আমরা রেগে আগুন হয়ে যাই। মারামারি, কাটাকাটি এমনকি খুন খারাবি পর্যন্ত হয়ে যায়। আমাদের ব্রেনে এই চিন্তাধারা আসতে দেইনা কেন?

এছাড়াও রাগ উঠলে আপনি আরও কিছু কাজ করতে পারেন যেমন - যে কাপড় পড়ে আছেন ঐ কাপড়েই গোসল করে ফেলুন। এক দৃষ্টিতে নিচে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকুন। নিরিবিলি কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে চলে যান। 


পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই রাগের সময় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। রাগ কমলে পরবর্তীতে ভেবে চিন্তে কারো সাথে পরামর্শ করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। 

আজকের এই লেখাটি নারী পুরুষ সকলের জন্য সমান উপকারী। কারণ রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল গুলো জানা থাকলে বিশেষ মুহূর্তে নিজেকে সংযত রেখে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনার জন্ম দেওয়া থেকে রেহাই পাবেন। তাই আপনাদের কাছে নিবেদন রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল গুলো নিজে জানুন এবং অন্যকেও জানতে সহায়তা করুন । তাই কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটা সবার মাঝে বেশি বেশি শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Next Post Previous Post