মূত্রনালী সরু হলে করণীয় | ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার চিকিৎসা | প্রস্রাব আটকে যাওয়া

মূত্রনালী সরু হলে করণীয় | ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার চিকিৎসা | প্রস্রাব আটকে যাওয়া

পৃথিবীতে রোগের শেষ নাই। ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের রোগ। একেক রোগের একেক নাম। তেমনই একটি রোগ হচ্ছে ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার অর্থাৎ প্রস্রাব আটকে যাওয়ার রোগ। ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার একটি জটিল রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রস্রাবের নালি সরু হতে থাকে। নারী বা পুরুষ উভয়েই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা না নিলে পুরো মূত্রনালী অকজো যেতে পারে।

Urethral Stricture রোগ সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণা নেই তাদের জন্যই মূলত আজকের এই পোস্ট।আজকের এই পোস্টে ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগ সম্পর্কে এবং ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগের সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আশা করি। পোস্টটি পড়ে রোগ সম্পর্কে যা যা জানতে পারবেন ঃ

- ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার কী,
- Urethral Stricture এর লক্ষণ,
- মূত্রনালী সরু হওয়ার কারণ,
- ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার এর চিকিৎসা পদ্ধতি,
- Urethral Stricture এর অপারেশন খরচ।

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার কি

Urethral Stricture হলো প্রস্রাবের রাস্তা কোনো কারণে সরু বা চিকন হয়ে যাওয়া। চিকন হতে হতে একপর্যায়ে রোগীর প্রশ্রাব বের হতে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয়। এটা মূত্রনালীর যে কোনো জায়গায় হতে পারে। পুরুষাঙ্গের মুখের দিকেও হতে পারে আবার একদম ভিতরের দিকে প্রস্টেটের মধ্যেও হতে পারে, কিংবা প্রস্রাবের পুরো রাস্তাটাই খারাপ হয়ে যেতে পারে। 

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগের লক্ষণ

মূত্রনালী সরু হয়ে যাওয়া এটি অত্যন্ত জটিল একটি রোগ। এই রোগে একবার আক্রান্ত হলে প্রশ্রাব করতে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগের লক্ষণ গুলো হলো- কষ্টকর প্রশ্রাব, পেশাব শেষ করতে অনেক সময় লাগা, একেবারে চিকন প্রশ্রাব হওয়া, হঠাৎ পেশাব আটকে যাওয়া, প্রশ্রাবের রাস্তা ব্লক হয়ে যাওয়া।

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার এর কারণ

মূত্রনালী সরু হলে করণীয় কী, এই আলোচনা শুরু করার আগে চলুন জেনে নিই কী কী কারণে মূত্রনালী সরু হয়ে যেতে পারে-
  • মূত্রনালীতে বা পেনিসে আঘাতজনিত কারণে যেমন - মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা, গাছ থেকে পড়ে যাওয়া, খেলতে গিয়ে আঘাত পাওয়া, কলকারখানায় আঘাত ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচারের অন্যতম কারণ।
  • মূত্রপথে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমনে।
  • মূত্ররাস্তায় প্রদাহের কারণে ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার হতে পারে।
  • অনেকের আবার জন্মগত কারণেও মূত্রনালীর অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
  • মূত্রপথে বা এর আশেপাশে ক্যান্সার হলে ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার হতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে ক্যাথেটার ব্যাবহারের কারনেও Urethral Stricture হতে পারে। 
  • গনোরিয়া রোগের কারণেও Urethral Stricture হতে পারে।

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগের লক্ষণ

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগের লক্ষণ গুলো হলো ঃ
  • প্রস্রাবের রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া।
  • প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া।
  •  চিকন ধারায় প্রশ্রাব বের হওয়া।
  • প্রচন্ড চাপ দিয়ে প্রশ্রাব করা।
  • অনেক সময় জোড়ে চাপ দিলেও যেন ইউরিন বেরিয়ে আসতে চায়না।
  • মূত্রথলি ক্লিয়ার না হওয়া।
  • তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

 ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার চিকিৎসা  না করালে কী সমস্যা হতে পারে

  • প্রস্রাবের রাস্তা সরু হতে হতে একসময় ব্লক হয়ে যেতে পারে।
  • ধীরে ধীরে ইউরিনের গতি কমে যেতে পারে।
  • মূত্রনালীতে আরেকটি পথ তৈরি হতে পারে।
  • দুই তিন নালে চিকন প্রস্রাব হতে পারে।
  • তলপেটে ও পেনিসে অনবরত ব্যথা হতে পারে।
  • প্রশ্রাবের সাথে রক্ত আসতে পারে ও জ্বালাপোড়া করতে পারে।
  • জোরে চাপ দিয়ে প্রশ্রাব করার কারণে কিডনী বড় হয়ে যেতে পারে।
  • প্রস্রাব কিডনিতে ফিরে এসে কিডনির কার্যকারিতা লোপ পেতে পারে।
  •  মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমে থাকার কারণে বারবার সংক্রমণ হতে পারে  

 ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার চিকিৎসার জন্য রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

কারো মূত্রনালী সরু হলে করণীয় হচ্ছে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা। Urethral Stricture এর চিকিৎসা শুরু করার আগে প্রথমেই রোগীর ইউরিনের রুটিন এনালাইসিস অর্থাৎ রুটিন এবং কালচার পরীক্ষা করে দেখা যে তার ইউরিনে কোনো ইনফেকশন আছে কিনা।

এরপর দরকার হয় একটা ইউরোফ্লোমিট্রি টেস্ট । এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর প্রশ্রাবের গতি পরীক্ষা করা হয়। এরপর প্রয়োজন হয় প্রস্রাবের রাস্তায় একটা আল্ট্রা সাউন্ড ( Ultrasound KUB ) পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলো দেখে আমরা ইনিশিয়ালি একটা ডায়াগোনোসিস করতে পারি যে এই রোগীর ইউরেথ্রাতে কোনো সমস্যা আছে কিনা।

এই পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলোর পর আমাদের যদি মনে হয় যে স্ট্রিকচারের সম্ভাবনা আছে, সেক্ষেত্রে আমাদেরকে সনাক্ত করতে হবে মূত্রপথের ঠিক কোথায় Stricture হয়েছে এবং সেটা কতটা জায়গা জুড়ে। সেই জন্য বিশেষ এক ধরনের এক্স-রে করা হয়ে থাকে যার নাম RGU & MCU

RGU & MCU হলো একটা Radiological পরীক্ষা যেটাতে রোগীর প্রশ্রাবের রাস্তা দিয়ে  কিছু ঔষধ প্রবেশ করিয়ে কিছু এক্স-রে তোলা হয়। এটার মধ্যে পরিস্কার দেখা যায় মূত্রপথের  ঠিক কোথায় স্ট্রিকচারটা হয়েছে এবং ব্লাডারের আকার আকৃতি ও অবস্থান ঠিকঠাক মতো আছে কিনা।

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার চিকিৎসা  পদ্ধতি:

এটা অতি প্রাচীন একটা রোগ। এই রোগের বর্ণনা প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। এই রোগের সবথেকে প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ইউরেথ্রাল ডাইলেটেশন। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ শতাব্দীর দিকে এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা বাঁশের চিকন কঞ্চি প্রশ্রাবের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে ডাইলেইট করতো। তখন জটিল এই কাজটা সম্পূর্ণ ব্লাইন্ড প্রসিডিউর হিসেবে করা হতো অর্থাৎ ইউরেথ্রাটাকে চোখে না দেখে আন্দাজের উপর ডাইলেইট করা হতো। সেটা ছিল অত্যন্ত ক্ষতিকর একটা প্রক্রিয়া।

প্রাচীন সেই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আছে। কিন্তু বাঁশের কঞ্চির জায়গায় স্থান পেয়েছে উন্নত মানের মেটালিক বুজি। এখন যেটা করা হয় সেটা হচ্ছে অ্যান্ডোস্কোপিক ডায়ালাইটেশন অর্থাৎ সম্পূর্ণ ইউরেথ্রোটাকে সরাসরি চোখে দেখে ডাইলেটেশন করা। ইদানিং আস্তে আস্তে প্রাচীন সেই পদ্ধতিটাও প্রায় উঠে যাচ্ছে। চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেক ধরনের উন্নত টেকনোলজি আসার কারণে সেটা এখন আর ব্যবহার হয়না বললেই চলে। কারণ এটা কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নয়। কারো মূত্রনালী সরু হলে করণীয় হচ্ছে স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা।

Stricture এর স্থায়ী চিকিৎসা হলো সার্জারি। এটা দুই ধরনের -
১) Optical Internal Urethrotomy
২) Buccal Mucosa Urethroplasty

Stricture এর অপারেশন নির্ভর করে এটা কতটুকু বড় অর্থাৎ কতটা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। যদি ছোট হয় , তাহলে সেটাকে OIU এর মাধ্যমে লেজার দিয়ে হোক কিংবা এন্ডোস্কোপ দিয়ে হোক প্রস্রাবের রাস্তার ভিতরে চিকন হয়ে যাওয়া অংশটুকু কেটে মোটা করে দেওয়া হয়। এরপর পেশেন্টকে একটা রেগুলার Self Dilatation শিখিয়ে দেওয়া হয়। এতে তারা নিজে নিজে প্রস্রাবের রাস্তাটা একটা ডাইলেইট ক্যাথেটার দিয়ে ডাইলেইট করবে যাতে ইউরিনের পথটা খোলা রাখা যায়। এই কাজটা নিয়মিত করতে হয়।

কিন্তু Stricture যদি বড় সাইজের হয় , সেক্ষেত্রে OIU চিকিৎসা পদ্ধতি কাজে লাগেনা। তখন একমাত্র উপায় হচ্ছে একটা কনস্ট্রাকটিভ সার্জারি Buccal Mucosa Graft. রোগীর গালের ভিতরের নরম চামড়া কেটে নিয়ে পেনিসের ভিতরে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে ইউরিনের একটা নতুন পথ তৈরি করে দেওয়া হয়। মুখের ভিতরের চামড়া আর প্রস্রাবের নালীর চামড়া যেহেতু একই রকম তাই সেখান থেকে নিয়ে জোড়া লাগালে কোনো সমস্যা হয়না। এটি একটি স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি। সফলতার হার শতকরা ৯০ পার্সেন্ট বা তারও বেশি।

Urethral Stricture এ সাধারণত মাঝ বয়সী বা বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাচ্চাদের মধ্যে এটা খুবই কম। যদিও থেকে থাকে সেটি জন্মগত। জন্মগত হলেও চিকিৎসা পদ্ধতি একই। অপারেশন।
স্ট্রিকচারের সবচাইতে খারাপ দিক হলো পুনরায় ফিরে আসার প্রবনতা। তবে সঠিক স্ট্রিকচারের সঠিক চিকিৎসা করা হলে ফিরে আসার চান্স খুব কম থাকে। তাই অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত।

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগের চিকিৎসা করার আগে আমি রোগীদেরকে আশ্বস্ত করি এই কথা বলে যে, যদি ছোট Stricture হয় তাহলে OIU (Optical Internal Urethrotomy) র মাধ্যমে ৮০ শতাংশ রোগীকে ভাল করে দেওয়া সম্ভব। ২০ শতাংশের অবশ্য চান্স থাকে ভবিষ্যতে পুনরায় আক্রান্ত হতে। কিন্তু BMG Urethroplasty করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। এটা একটা পারমানেন্ট সলিউশন।

মূত্রনালী সরু হলে করণীয় কী আশা করি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন। স্ট্রিকচার প্রতিরোধ করাটা কারোর নিজের কন্ট্রোলের মধ্যে নেই। তবে প্রাথমিকভাবে এই disease না হওয়াটাই আমাদের কাম্য। এই disease সাধারণত ইউরিনের ইনফেকশন থেকে হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই যৌন বাহিত রোগ যেমন গনোরিয়া থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং সেই ধরনের জীবন যাপন থেকে বিরত থাকলে আশা করি এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এই রোগটা অনেক সময় ক্যাথেটার থেকেও হয়। যদি কারোর কোনো কারনে ক্যাথেটার পড়ার প্রয়োজন হয়, সেটা শরীর থেকে যত তাড়াতাড়ি বের করে দেওয়া যায় ততই ভাল।


ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার রোগ সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন : আমার নাম শাহীন মাহমুদ। বয়স ৪১। আমার প্রশ্রাবের গতি একেবারেই কম। এবং চিকন নালে প্রশ্রাব হয়। জোরে কুৎ দিয়ে প্রশ্রাব শেষ করতে হয় , এতে ৮-১০ মিনিটের মতো সময় লাগে।  প্রায় ৫ মাস হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করিয়েছি। কোনো ফলাফল পায়নি। কী ঔষধ খেতে হবে?

উত্তর: Urethral Stricture এর কোনো ঔষধ এখন পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি। ঔষধ খেয়ে এই রোগ কখনোই ভাল হবে না। হোমিওপ্যাথি কিংবা হারবাল কোনো ঔষধের মাধ্যমে এই রোগ ভাল করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র সার্জারি ছাড়া এই রোগের কোনো ওষুধ নেই।

প্রশ্ন ২: ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার এর অপারেশন খরচ কত টাকা ?

উত্তর: Urethral Stricture সার্জারির খরচ হাসপাতাল ভেদে এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকার মধ্যে। রোগীকে চার দিন হাসপাতালে এবং দুই সপ্তাহ হাসপাতালের বাইরে থাকতে হয়।

প্রশ্ন: সাত মাস হয়েছে OIU অপারেশন করা হয়েছে। সাত মাস পার হতে না হতেই মনে হচ্ছে স্ট্রিকচার ফিরে আসছে। এখন কী করার আছে? উল্লেখ্য আমি নিয়মিত ক্যাথেটারাইজেশন করি।

উত্তর: OIU এর সফলতার হার ১০০% না, so এটা ফিরে আসতেই পারে। OIU হচ্ছে Optical Internal Urethrotomy. মূত্রপথের সংকীর্ণ অংশটুকু অপারেশনের মাধ্যমে কেটে একটা ড্রেইন করে দেওয়া হয়। ভাল সার্জনের হাতে করালে সফলতার হার ৮০% । এছাড়া অপারেশনের পর নিয়মিত ক্যাথেটারাইজেশন করে যেতে হবে। বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। আপনার ক্ষেত্রে সম্ভবত BMG করানোর দরকার হতে পারে।

প্রশ্ন: Urethral Stricture এর সেরা চিকিৎসা কী?

উত্তর: BMG ইউরেথ্রোপ্লাস্টি।

প্রশ্ন: BMG অপারেশনের পরেও কি স্ট্রিকচার ফিরে আসতে পারে?

উত্তর: BMG অপারেশনের পরেও যে স্ট্রিকচার ফিরে আসবেনা এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। তাছাড়া BMG অপারেশনের Success Rate 90 to 98 %। পুনরায় ফিরে আসলে সেটা আপনার ভাগ্য।

প্রশ্ন: অপারেশনের কোনো সাইড এফেক্ট আছে কি ? যেমন লিঙ্গ উত্থান সমস্যা, সন্তান জন্মদান

উত্তর: না। এই অপারেশনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সার্জারির পরেও আপনি আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। ইরেকটাইল ডিসফাংশন কিংবা সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না।

প্রশ্ন: Urethral Stricture কি পুরোপুরি ভাল হয়?

উত্তর: হা, ভাল হওয়ার চান্স অনেক বেশি যদি দক্ষ সার্জনের দক্ষ হাতে অপারেশন হয়। যদি Urethroplasty করানো হয় তাহলে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০-৯৮%
প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৩ বছর। আমার ফোঁটা ফোঁটা ও কষ্টকর প্রশ্রাব। প্রস্রাবের রাস্তার এক্স-রে করানো হয়েছে। স্ট্রিকচার ধরা পড়েছে। এখন আমাকে কি করতে হবে?
উত্তর: আপনার জন্য আমাদের পরামর্শ হলো একজন বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টের সাথে কথা বলেন। এক্স-রে রিপোর্টটা দেখান , উনিই বলে দিবেন কী করতে হবে।

প্রশ্ন: ইউরেথ্রোপ্লাস্টি কি ?

উত্তর: এটা একটা প্লাস্টিক সার্জারি, (Buccal Mucosa Graft) প্রশ্রাবের রাস্তায় সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া অংশটুকু কেটে ফেলে দিয়ে শরীরের অন্যান্য স্থান থেকে চামড়া এনে ঐখানে লাগিয়ে দেওয়াই হচ্ছে Urethroplasty

প্রশ্ন: ইউরেথ্রোপ্লাস্টি অপারেশনের সাকসেস রেট কত?

উত্তর: ৯০ থেকে ৯৮%

প্রশ্ন: ইউরেথ্রোপ্লাস্টি কেন করা হয়?

উত্তর: কোনো কারণে মূত্রপথ সংকীর্ণ হয়ে গেলে প্রশ্রাবের নানান জটিলতা সৃষ্টি হয়। তখন প্রস্রাবের রাস্তা পুনর্গঠন করার জন্যই এই সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।

প্রশ্ন: Urethrotomy ও Urethroplasty এর মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: Urethrotomy হলো মূত্ররাস্তার সরু অংশটুকু একটা মেটালিক ব্লেড দিয়ে কেটে প্রশ্রাবের পথটা মোটা করে দেওয়া। Urethroplasty হলো মুখের ভিতর থেকে নরম চামড়া এনে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দেওয়া।

প্রশ্ন: ইউরেথ্রোপ্লাস্টি অপারেশন কতটা বেদনাদায়ক?

উত্তর: হালকা একটু ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেকই আবার ব্যথা অনুভব করেন না। ব্যথা হলে ব্যথানাশক ঔষধ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: এই অপারেশন করতে কত সময় লাগে?

উত্তর: স্ট্রিকচারের তীব্রতার উপর নির্ভর করে ২ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।

প্রশ্ন : ইউরেথ্রোপ্লাস্টি সার্জারি কিভাবে করা হয়?

উত্তর: এক বিশেষ ধরনের এক্স-রের মাধ্যমে মূত্রপথের সরু অংশটুকু খুঁজে বের করে সেটা কেটে শরীরের অন্য স্থান থেকে চামড়া এনে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: অপারেশনের কত দিন পর রোগী স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারবে?

উত্তর: অপারেশনের পর দুই সপ্তাহ স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেনা। কারণ দুই সপ্তাহ ক্যাথেটার পড়ে থাকতে হয়। দুই সপ্তাহ পর ক্যাথেটার খুলে ফেললে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারবে।


ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার অত্যন্ত বাজে ধরনের একটি রোগ। কেউ যদি একবার এই রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া খুবই দুস্কর। বারবার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর OMG ইউরেথ্রোপ্লাস্টি অতি সংবেদনশীল একটা অপারেশন। কোনো অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টের হাতে অপারেশন করা উচিত। যেহেতু প্রশ্রাবের নালীর ভিতরে অপারেশন তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে হয়। তবে এই অপারেশনের ফলাফল খুবই ভাল।

মূত্রনালী সরু হলে করণীয় কী এই সম্পর্কে চমৎকার একটা ধারণা দেওয়া হলো। পাশাপাশি ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচারের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও সঠিক গাইডলাইন দেওয়া হলো।  পুরা লেখাটা পড়ে মূত্রনালী সরু হলে করণীয় কী তা ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।

আজকের মতো এই পর্যন্তই। সবার মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে আল্লাহ হাফেজ।

আরও পড়ুন ঃ

Next Post Previous Post